ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েও নিয়োগ পায়নি মো. মঈন উদ্দিন নামে এক যুবক।
তাই নিয়োগ নিয়োগ না পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের প্রথম হওয়া সেই যুবক প্লেকার্ড হাতে নিয়েএকাই মানববন্ধন করলেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দ্বিতীয় হওয়া ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন।
তাই চাকুরি পেতে একাই প্লেকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন প্রথম হওয়া এই যুবক।
শনিবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় নাসিরনগর উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে তিনি এ মানববন্ধন করেন। ভুক্তভোগী ওই যুবক গত ২ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জেঠাগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় হওয়া ব্যাক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবেক মোনাব্বর হোসেন বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতার সহিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। উত্তর পত্র জমা দেওয়ার পরও কিভাবে তিনি খাতা দেখে পুনরায় মূল্যায়ন করেন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দিলেন সেটা বোধগম্য নয়। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী কাজ।
মঈন উদ্দিন উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের গুনিয়াউক গ্রামের রঙ্গু মিয়ার ছেলে। অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া নিয়োগ বাতিল করে তাকে নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন তিনি।
মঈন উদ্দিন মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ২৩ নম্বর পেয়েও চাকরি হয়নি। অথচ ২২নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থী রুমা আক্তারকে নিয়োগ দিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক।
তিনি বলেন, জেঠাগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু গত ৩০ মে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, যিনি দ্বিতীয় হয়েছেন তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সব জানেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক। এরপর প্রধান শিক্ষক আমাকে বের করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, জেঠাগ্রামের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরীক্ষার সময় কোন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে সে সকল সম্ভাব্য প্রশ্ন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থী রুমা আক্তারকে পরীক্ষার পূর্বেই দিয়েছেন। এমনকি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থী রুমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
জেঠাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ১২ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে চুড়ান্ত পরীক্ষায় নয়জন অংশ নেন। গত ১ মে বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোনাব্বর হোসেন (বর্তমানে জেলা সদরে একই পদে পদায়ন), শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও নাসিরনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাইন উদ্দিন ভূইয়া, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম ভূইয়া, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মো. আওলাদ উপস্থিত ছিলেন। ওই নিয়োগের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী মো. মঈন উদ্দিন ৩০ নম্বরের মধ্যে ২৩ নম্বর পেয়ে প্রথম হন। পরীক্ষার এ ফলাফল নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করে চাকরি প্রত্যাশীদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন বলেন, যিনি লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন, আমি তার খাতা দেখেছি। প্রকৃতপক্ষে সে প্রথম হওয়ার যোগ্য না। তাই দ্বিতীয় হওয়া প্রার্থী অধিক যোগ্য মনে হওয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা শেষে খাতা দেখার নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর পর তার সাথে কথা বলতে একাধিকবার ফোন করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জেঠাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আওলাদ মিয়া জানান, নিয়োগের বিষয়ে সবকিছু বিদ্যালয়ের সভাপতি জানেন। নিয়োগ বোর্ডের সবাই স্বাক্ষর করার পর কিভাবে সভাপতি খাতা দেখলো জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
নাসিরনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল হক বলেন, নিয়োগ বোর্ডের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর পুনরায় খাতা দেখা ও প্রথম হওয়া ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় হওয়া ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে সেটি বিধিসম্মত হয়নি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধি মো. মাইনুদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, নিয়োগ বোর্ডে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেকেই ছিলেন। আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে যিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন তাঁকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছি। এরপরও দ্বিতীয় স্থান হওয়া ব্যক্তিকে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হল? এ বিষয়ে চাইলে প্রথম হওয়া ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূইয়া বলেন, প্রথমস্থান অধিকারীকে রেখে দ্বিতীয় স্থান হওয়া ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়োগ বিধির পরিপন্থি। ভুক্তভোগীকে প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছি । তারা ব্যবস্থা না নিলে ওই প্রার্থী আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে।