ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতায় নিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।’
‘১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিলো, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।’ এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনও সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।’
বুধবার (২২ মে) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় কলকাতার নিউ টাউন থানায় মামলা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এরপর তিন দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। ভারতে গিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা ও তার দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন।
মূলত ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান তিনি। পরে ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২২ মে) এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল আজীমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বুধাবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের মানুষ জড়িত। নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার
আনারের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে। পেশায় ব্যবসায়ী আনার আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।
ব্যবসায়ী আনার ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪)সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।