বাবর আলী রবিবার ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান। বেজক্যাম্প ম্যানেজার ও আউটফিট মালিকের বরাত দিয়ে অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাবর আলী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২ হাজার ৩৪৯ ফুট) সফলভাবে আরোহণ করেন।এভারেস্ট জয় বাবর আলীর জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন। তিনি বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন এবং ভবিষ্যতের আরোহীদের জন্য পথ দেখিয়েছেন।
পর্বতের চূড়ায় উঠতে সময় লাগে দুই মাসের মতো।
যাত্রা শুরুর আগে বাবর আলী জানান, বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’
বাবরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চড় ইউনিয়নে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৩৩ বছর বয়সে এমবিবিএস পাস করেন। তবে আগে থেকেই বাবরের অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি বেশী ঝোঁক ছিল।
এমবিবিএস পাস করার পর কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিও করেছেন বাবর। তবে একটি অভিযানের জন্য ছুটি চেয়ে না পাওয়ায় তিনি শেষপর্যন্ত চাকরিই ছেড়ে দেন,তবু পিছু হটেননী বাবর। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন।
চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ এর সদস্য বাবর।
ক্লাবটির সদস্য ফারহান জামান জানান, এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে গত ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও সরঞ্জাম কেনা শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে বিমানযোগে নেপালের লুকলা শহরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বাবর লুকলা থেকে ট্রেকিং শেষ করে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পে পৌঁছান ১০ এপ্রিল। মূল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে সেখান থেকে ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লাবুশে ইস্ট চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি। ওই চূড়ায় তিনি পৌঁছান ১৬ এপ্রিল। আর বেজ ক্যাম্পে ফিরে আসেন ২৬ এপ্রিল। পর্বতের চূড়ায় উঠতে সময় লাগে দুই মাসের মতো।
যাত্রা শুরুর আগে বাবর আলী জানান, বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’
এর পর সেখান থেকে ২১ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-২ তে যান বাবর। মূলত ১৪ মে মধ্যরাতে সরাসরি ক্যাম্প-২ তে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে বাবরের মূল অভিযান শুরু হয়। ১৮ মে ২৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্প-৩ এবং পরদিন ১৯ মে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ডেথ জোনে অবস্থিত ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছান বাবর।
রবিবার ১৯ মে সকালে বাবর
২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতায় এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছান তিনি।
তবে বাবরের অভিযান এখানেই শেষ নয়। তার পরবর্তী লক্ষ্য বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বত লোৎসেও জয় করা।
যাত্রা শুরুর আগে বাবর আলী জানান, বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পর্বতে আরোহণ করতে যাচ্ছেন তিনি।
এর আগে কোনো বাংলাদেশি একই অভিযানে দু’টি আট-হাজারী পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করেননি।
উল্লেখ্য, আট-হাজারী পর্বতশৃঙ্গ বলতে বিশ্বের ১৪টি সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গকে বোঝায়, যাদের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার মিটারের (২৬,৪২৭ ফুট) বেশি। এই পর্বতশৃঙ্গের সবগুলোই এশিয়ার হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত।
বাবরের তার পর্বতারোহণ গাইড ভিরে তামাংকে সঙ্গে নিয়ে লোৎসেও পর্বত জয়ের লক্ষ্যে শীঘ্রই অভিযান শুরুর কথা রয়েছে।
এভারেস্ট জয় করায় ভার্টিকাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে আশরাফুল আরেফিন আসিফ বাবরের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাবরের সাফল্য কেবল তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি পুরো দেশের জন্য গর্বের। এটা আমাদের দেশের যুবকদের আরও বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সেগুলো পূরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’
তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালে ভার্টিকাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাবর নেপাল ও ভারতের বিভিন্ন পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করেছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি নেপালের আমা দাবলাম পর্বতের শীর্ষে আরোহণ করেছেন। তিনি সাইক্লিং, ম্যারাথন ও স্কুবা ডাইভিংও করেন। তিনি সাইকেল চালিয়ে ভারতের দীর্ঘতম মহাসড়ক (কাশ্মীর-কন্যাকুমারী রুট) এবং পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বাবরের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘বাবর শুধু তার পরিবারকে নয়, পুরো জাতিকে গর্বিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওর জন্য চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি, তবে ওর সফল হওয়ার কথা শোনার পর আমরা খুব খুশি। ও যেন এখন নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
বাবরের শৈশবের কথা বলতে গিয়ে তার মা লুৎফুন্নাহার বেগম বলেন, ‘বাবর শৈশব থেকেই দুঃসাহসিক ও পড়ালেখার বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবর আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য ডাক্তার হয়েছে। কিন্তু বাবরের স্বপ্ন ছিল অসাধারণ কিছু করার। অবশেষে বাবর এভারেস্টের চূড়া জয় করে সে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছে।’
বাবর বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চূড়া আরোহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সের্গো রি (৪,৯৪৮ মিটার), সূর্য পিক (৫,১৪৫ মিটার), মাউন্ট ইউনাম (৬,১১৬ মিটার), মাউন্ট ফ্যাবরাং (৬,১৭২ মিটার), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নীলদা (৬,৩০৩ মিটার), মাউন্ট শিবা (৬,১৪২ মিটার), মাউন্ট রামজাক (৬,৩১৮ মিটার), মাউন্ট আমা ডাবলাম (৬,৮১২ মিটার) এবং চুলু ইস্ট পিক (৬,০৫৯ মিটার) পর্বতের চুড়ায় ওঠেছেন এই তরুন।
এছাড়াও বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন বাবর। সাইক্লিং, স্কুবা ডাইভিংও করেন তিনি।
বাবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গত বছর সাইকেল চালিয়ে ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পৌঁছান। কাশ্মীর-কন্যাকুমারী রুটটি ভারতের দীর্ঘতম মহাসড়ক। এর দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটার।
বাবরের এভারেস্ট অভিযানে খরচ হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। তার এ অভিযানে স্পন্সর করেছে ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়াও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ক্লজ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী ও পিরি এ অভিযানে বাবরকে সহায়তা করেছে।
সর্বশেষ বাবর আলী পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন চট্টগ্রামের বাবর আলী। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। তার এভারেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও কোনো বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় লাল সবুজের পতাকা ওড়ালেন।
বাবর আলী রবিবার ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান।
বেজক্যাম্প ম্যানেজার ও আউটফিট মালিকের বরাত দিয়ে অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালের ২৩ মে মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট জয় করেন। পরের বছরের ২১ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। আর ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার এবং ২৬ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরিন এভারেস্ট জয় করেন।
এরপর ২০১৩ সালের ২০ মে মো. খালেদ হোসেন পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট চূড়া জয় করেন। তবে চূড়া থেকে নামার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।