দুই মাস সময় বাড়ানোর পর চূড়ান্ত হিসাবে দেখা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারধারীর (টিআইএন) সংখ্যা ১ কোটি ছুঁই ছুঁই।
এর অর্থ হলো টিআইএনধারীর দুই-তৃতীয়াংশই ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেননি। টিআইএনধারীর সংখ্যার বিবেচনায় যে পরিমাণ রিটার্ন জমা পড়েছে, তাকে সন্তোষজনক বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য (ইনকাম ট্যাক্স পলিসি) ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ টিআইএনধারী রয়েছেন, সে বিবেচনায় ৩৫ লাখের সামান্য বেশি রিটার্ন জমা সন্তোষজনক নয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, রিটার্ন দিয়ে বিপদ ডেকে আনব কি না। আয়, সম্পদের তথ্য দিতে গিয়ে হয়রানির (ট্যাক্সম্যানদের) মধ্যে পড়েন কি না, এই ভয়ে তারা রিটার্ন দিতে চান না।’
এছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, নতুন আইন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সঠিক তথ্যের অভাবও ট্যাক্স রিটার্ন কম জমা দেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সৈয়দ আমিনুল করিম।
তবে এনবিআর সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ (ট্যাক্স অ্যাডমিন অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট) রিটার্ন জমা দেওয়ার সংখ্যা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, কেননা এখনও কোম্পানির রিটার্ন জমার মেয়াদ শেষ হয়নি। ফলে আরও বাড়বে।’
কোম্পানির জন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে ট্যাক্স রিটার্নের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।
গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজারের কিছু বেশি। কয়েক মাস আগে এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ রিটার্ন জমা হয়েছিলো ৩৫ লাখের মত।
এনবিআর সদস্য আমিনুল করিম বলেন, এবার নতুন আয়কর আইনে সময়মতো ট্যাক্স রিটার্ন জমা না দিলে কিছু কঠোর শাস্তি দেওয়ার কারণে যারা সময়মতো রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এর পর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত হবেন না।
‘এর অর্থ হলো অতীতের বছরগুলোর মতো এবার নির্ধারিত সময়ের পর রিটার্ন জমা খুব বেশি হয়তো হবে না,’ বলেন তিনি।
দুই বছর আগে পর্যন্ত ৩৫ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে টিআইএন প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তাতে টিআইএন বাড়তে শুরু করলেও রিটার্ন তেমন বাড়ছিল না। এরপর এনবিআর ৩৮ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রুফ অভ সাবমিশন অভ রিটার্ন বা পিএসআর জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক করে। গত বছর নতুন আয়কর আইনে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৪৩ করা হয়, অর্থাৎ এসব সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসআর দেখাতে হবে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আশা করেছিলেন, এসব উদ্যোগের কারণে এবার অর্ধেকের কাছাকাছি টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হয়নি।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পিএসআর যাচাই করার দায়িত্বে রয়েছে, তারা হয়তো নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না।
সূত্রঃ টিবিএস