ছবি: সৌদি এরাবিয়া রেলওয়ে
বিলাসবহুল ট্রেন ‘ড্রিম অব দ্য ডেসার্ট’ ২০২৫ সালের শেষের দিকে চালু হবে। ট্রেনটি সৌদি আরবের রাজধানী শহর রিয়াদ থেকে জর্ডানের উত্তর সীমান্তের কাছাকাছি কুরায়েত শহর পর্যন্ত যাত্রা করবে।
রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে প্রতিষ্ঠান সৌদি এরাবিয়া রেলওয়েজ (এসএআর) এর মাধ্যমে নিজস্ব বিলাসবহুল ট্রেনের জগতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। সেইজন্য ইতালির সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আর্সেনাল গ্রুপের সাথে ৫৩.৩৩ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে দেশটি।
মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরণের বিলাসবহুল ট্রেনের উদ্যোগ এই প্রথম। ২০১৯ সালে থেকেই সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের নিজেদের দেশে ভ্রমণে আকৃষ্ট করতে থাকে। এক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করে দেশটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা স্থান। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বড় বড় বিনিয়োগ হয়েছে। যেমন, সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিমের মরুভূমিতে ‘নিওম’ মডেল সিটি তৈরিতে প্রায় পাঁচশ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ হয়েছে।
বিলাসবহুল ট্রেন ক্রুজ
সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই বিলাসবহুল ট্রেন ‘ড্রিম অব দ্য ডেসার্ট’ ২০২৫ সালের শেষের দিকে চালু হবে। গত সপ্তাহে দেয়া এসএআর এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ট্রেনটি সৌদি আরবের রাজধানী শহর রিয়াদ থেকে জর্ডানের উত্তর সীমান্তের কাছাকাছি কুরায়েত শহর পর্যন্ত যাত্রা করবে।
১৩০০ কিলোমিটারের এই দীর্ঘ রেলপথ ধরে সৌদি আরবের মরুভূমির অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে যাত্রা করবে ট্রেনটি। ৪০ টি বিলাসবহুল কেবিন বিশিষ্ট নির্মাণাধীন এই ট্রেনটি ‘সৌদি শৈলী ও ঐতিহ্যের’ কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। ট্রেনটিতে রিজারভেশন নেয়া শুরু হবে এ বছরের শেষ থেকে।
আর্সেনালের সিইও পাওলো বারলেটার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এক বা দুই রাতের ছোট এই ভ্রমণে সর্বোচ্চ ৮২ জন যাত্রী নেয়া সম্ভব হবে।
সবুজতর বিকল্প
বিভিন্ন দেশগুলোতে উচ্চ গতির ট্রেন এবং বিলাসবহুল রেল ক্রুজের ব্যপক চাহিদা থাকায় সৌদি আরব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক বছর বা তার কিছু পরেই আর্সেনাল গ্রুপ এবং এ্যাকর গ্রুপের সাথে মিলিতভাবে ‘ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-লা দলচে ভিটা’ এর যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
১১ কামরাবিশিষ্ট ‘লা দলচে ভিটা’ ১৯৬০ দশকের আদলে বানানো হয়েছে। ২০২১ সালে পর্দা তোলে এই ট্রেনটি। ১২টি ‘ডিল্যাক্স কামরা’, ১৮ টি ‘অনার স্যুট’ রয়েছে এই ট্রেনটিতে।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেন অনেক বেশি টেকসই উপায়। একইসাথে এটির মাধ্যমে যাত্রাপথের বড় এবং বিখ্যাত শহরগুলোর সাথে ছোট বা স্বল্প বিখ্যাত শহরগুলোতেও ঘুরে আসা যায়; যা আরো ভিন্ন মাত্রা যোগ করে ভ্রমণে।
২০১৮ সালে সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার সাথে জেদ্দার ‘কিং আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সাথে সংযুক্তকারী ‘হারামাইন হাই স্পিড রেইলওয়ে’ চালু হবার এক বছরের মাথায় ‘ড্রিম অফ দ্য ডেসার্ট’ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ
দেশের উত্তর-পশ্চিমে উচ্চ গতি সম্পন্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে ঘন্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতির রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব।
শুধু তেল থেকে আসা প্রবৃদ্ধির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈচিত্রতা আনতে পর্যটন ক্ষেত্রে ২০২২ সালে সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ সারা দেশব্যপী ৮০০০ কিলোমিটার (৪৯৭০ মাইল) রেলপথ বানানোর ঘোষণা দেয়।
২০৩০ সালের মধ্যে আগামী ১০ বছরে ৭০ মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ করতে ৮০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিম মরুভুমিতে ‘নিওম’ মডেল সিটির সাথে ‘রেড সি কোস্ট’ এর মত আরো কিছু বিলাসবহুল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার।
ছবি: সৌদি এরাবিয়া রেলওয়ে
তাদের এই প্রচেষ্টার ফলাফলও দেখা যাচ্ছে হাতেনাতে। ইউএনডব্লিউটিও এর মতে, ২০১৯ সালে মহামারীর আগে থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন বেড়েছে ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত।
দেশটির সরকারের নেয়া ‘সৌদি ভিশন ২০৩০’ প্রোগ্রামে সৌদি রেলওয়ে অঙ্গীকার করেছে যে, দেশের পর্যটন এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রকে ‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র’ হিসেবে গড়ে তোলার।
এসএআর এর সিইও বাশার বিন খালেদ আল মালিকের মতে, ‘ড্রিম অব দ্য ডেসার্ট’ পর্যটক এবং অধিবাসী সকলের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটিতে এক আলাদা মাত্রা যোগ করবে। এসএআর এবং আর্সেনালের মধ্যে এমওইউ সই করার মধ্য দিয়ে রেল ভ্রমণের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি।
তবে ‘অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস- লা দলচে ভিটা’, লন্ডন থেকে ভেনিস পর্যন্ত ‘ভেনিস সিমপ্লন- ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ অথবা জাপানের সবচেয়ে বিলাসবহুল ট্রেন, কিয়ুসুর ‘সেভেন স্টারস’ সাথে সৌদি আরবের ‘ড্রিম অব দ্য ডেসার্ট’ টক্কর দিতে পারবে কি-না সেটি নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
সুত্রঃ টিবিএস