আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
আজ (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকার ড. ইউনুসকে হয়রানি করছে না। সরকার মিথ্যা মামলাও করেনি।
ড. ইউনুস কে হয়রানি করা হচ্ছে মর্মে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে বিবৃতি অথবা মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানানোর জন্য মন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
তিনি বলেন, “শ্রম অধিদপ্তরের তদন্তে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল।”
আনিসুল হক যুক্ত করেন, “ট্রায়াল ইজ ওভার। এখন বিদেশ থেকে দেখতে চাওয়ার মানে কি?”
গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনুসসহ চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩। একই সঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাদের প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এরপর বিভিন্ন দেশের ১২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক এ নিয়ে বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর আগে ১২ জন সিনেটরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনেকদিন থেকে বিচারহীনতায় ভুগেছে দেশ। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ বিচারহীনতার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং করে যাবে।”
আনিসুল হক বলেন, “২০১৭ সালে শ্রমিকরা অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ও ন্যায্য প্রাপ্য দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে শতাধিক মামলা করেন। পরে ন্যায্য প্রাপ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তারা এই মামলা প্রত্যাহার করে। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তরের কাছে মনে হয় যে শ্রমিকরা যে অভিযোগ করেছেন তাতে ওই প্রতিষ্ঠানে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেই কারণে তারা তদন্ত করে এবং শ্রম দপ্তরের তদন্তে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার একাধিক ঘটনা উঠে আসে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনুসকে সতর্ক করা হয় এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু পরামর্শ তিনি গ্রহণ করেননি। এরপর শ্রম দপ্তর মামলা করেছে।”
তিনি আরো বলেন, এই মামলার বিষয়ে ড. ইউনুস হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন এবং দুই জায়গা থেকেই আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। “এর অর্থ হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলা পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনুস ২০৫ ধারায় আবেদন করে মামলার শুনানিতে হাজির না থাকার বিষয়ে সময় চেয়েছেন। তিনি যতবার আবেদন করেছেন আদালত তাকে ততবার সময় দিয়েছেন। আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন। একইভাবে ৩৪২ ধারায় আসামির জবানবন্দির সুযোগ রয়েছে। ড. ইউনুস জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যেসব তথ্য আসে তার ভিত্তিতে এই ধারায় আসামি দোষী কি দোষী নয় তা বলার সুযোগ পায়।”
কোর্টে চলমান মামলাগুলোর গতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এক একটি মামলার ধরন একেক রকম। সমাজের চাহিদার প্রেক্ষিতে কোন কোন মামলা নিষ্পত্তি হয়। যেমন ফেনীর ধর্ষণ মামলা, সিলেটের শিশু হত্যা মামলাসহ আরও মামলা রয়েছে, যেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে।”
ড. ইউনুসের কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনুস আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছেন এবং হেরেছেন। তিনি ১২ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছেন। কেউ কর ফাঁকি না দিলে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করে না।”
আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি নিয়মিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।
সাংবাদিক সাগর-রুনির মামলার তদন্তু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, “প্রকৃত দোষী চিহ্নিত করতে তদন্তে সময় লাগতে পারে। এজন্য ৫০ বছর লাগলেও আমাদেরকে সময় দিতে হবে।”
সূত্রঃ দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ড