উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে।
তবে কৃষকরা বলছে, ধান কাটা-মাড়াই পুরোদমে শুরু হতে আরো ৭দিন সময় লাগতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের যথাযথ পরামর্শে যথাসময়ে কৃষকরা ভালো পরিচর্যা করায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
একদিকে তাপদাহ অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে কৃষকদের কষ্ট হলেও ভালো ফলন হওয়ায় মনের আনন্দে ধান কেটে মাড়াই এর কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও ভালো ফলনে বেজায় খুঁশি। তবে শেষ পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছে কৃষকেরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছর এসময় দেশের দক্ষিণ ও উওরাঞ্চল বিশেষ করে নাটোরের লালপুর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ, চিলাহাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ী ও ডোমারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিক এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আসতে শুরু করেছে।
এদিকে জেলার ১১টি উপজেলার দিগন্তজুড়ে পাকা ধানের সোনালি রঙের সমারোহ। চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের ভালো ফলনের বুকভরা আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। বাজারে নতুন ধানের আমদানি হওয়ায় কেনা-বেচা শুরু হলেও দাম ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলার ১১ টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৯’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মান্দা,নিয়ামতপুর,পোঁরশা,সাপাহার,ধামইরহাট,
পত্নীতলা,মহাদেবপুর, বদলগাছি,আত্রাই রাণীনগর উপজেলাসহ সর্বাধিক পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে।
এবারে বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের বোরোচাষে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। বিশেষ করে বীজতলা থেকে ধান রোপন ও পরিচর্যা সব মিলিয়ে মাঠে মাঠে
কৃষকের ধান এখন দর্শনীয় হয়ে উঠেছে।
অনেক মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে। জেলার প্রতিটি মাঠে এখন পুরোদমে বোরো ধান কাটতেও শুরু করেছে।
তারপরও অধিকাংশ মাঠগুলোতে ধানের শীষের সাথে এখন দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠের পর মাঠ সোনালী রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। ঈদুল ফিতরের পর থেকেই পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।
মান্দা উপজেলার পরানপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মাজেদ জানান, আমি এ বছর ১১ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে যথাসময়ে ভালো পরিচর্যা করায় আমার জমিতে ধান ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধানকাটা শুরু করেছি, ফলনও ভালোই হচ্ছে।
নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের কৃষক রুবেল জানান, আমি এবার ১৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ধানকাটা শুরু করেছি, ফলনও ভালোই হয়েছে। আশা করি বাজারে দামও ভালো পাবো।
মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটের ধান ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, গত হাটে তেমন ধান আমদানি শুরু হয়নি। তবে টুকটাক বেচা-কেনা হয়েছে। আশা করছি দু-চারদিনের মধ্যে পুরোদমে ধান আমদানি শুরু হবে।
এবার নওগাঁ জেলায় কোথাও মাঝড়া পোকার আক্রমণ নেই। এবং উপজেলার প্রতিটি উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বোরো চাষের শুরু থেকেই ভাল মানের বীজ, জমির উর্বরতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি।
বর্তমানে জেলার প্রতিটি উপজেলাতে ধান কাটা মাড়াই শুরুও হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। তারপরও যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেকে গেছে ওই সব জমির ধান দ্রুত কেটে নিতে আমরা কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি।