ছবির উৎস, GETTY IMAGES
ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড । দেশগুলো বলেছে, তাদের এই স্বীকৃতি দেয়ার মানে হলো মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করা।
দেশ তিনটি আশা করছে, যৌথভাবে এই পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে তারা অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে, যাতে তারাও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তারা মনে করেন এভাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হলে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও হামাসের হাতে জিম্মিদের উদ্ধার করে আনা সম্ভব হতে পারে।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস এটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ’ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
“আমি মনে করি, এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে এই বার্তা যাচ্ছে যে, আপনি এমন বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারেন, যার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান এখনো সম্ভব, যখন অনেকেই সেই সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিতে চাইছেন,’’ বলেছেন তিনি।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইদে এই ঘোষণাকে ‘নরওয়ে-ফিলিস্তিন সম্পর্কের’ জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বলেছেন, “ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া মানে শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ন্যায়পরায়ণতা নয় বরং খুব জরুরি একটি পদক্ষেপ যদি সবাই শান্তি চায়।’’
এই প্রতীকী এই সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করে তুলেছে ইসরায়েলের সরকারকে। দেশটি বলেছে, এই স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করলো তিনটি দেশ।
আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং স্পেন থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে তেল আবিবের অবস্থানরত এসব দেশের রাষ্ট্রদূতকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরস্কারও করেছে তারা।
গত সপ্তাহেই ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তলব করে সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার ভিডিও দেখিয়েছিল।
ছবি – ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ।
ফিলিস্তিনকে এই তিন দেশের স্বীকৃতির ফলে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ আরো বাড়লো। এসব ঘটলো এমন সময় যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)কে দক্ষিণ গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি বাসিন্দাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হারও বাড়িয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়া দেশ ভেদে নানারকম হয়ে থাকে। সাধারণত এর ফলে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি অথরিটির সাথে পরিচয়পত্র আদানপ্রদান করা হয়ে থাকে।
পশ্চিম তীর বা পূর্ব জেরুসালেমে থাকা এসব দেশের কনস্যুলেট তখন আনুষ্ঠানিক দূতাবাসে পরিণত হবে। সেখানকার প্রধান ব্যক্তিরা পুরাদস্তুর রাষ্ট্রদূত বলে গণ্য হবেন।
স্বীকৃতি দেয়া তিনটি দেশ জানিয়েছে, তারা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ-পূর্ব সীমানার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে যখন জেরুসালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন- উভয় দেশের রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
ছবির উৎস, REUTERS
ছবির ক্যাপশান,যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার এক শিশু।
কূটনীতিকরা ধারণা করছেন, এই পদক্ষেপের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাচ্ছে ইসরায়েল, যাতে অন্য কোনো দেশ আর এভাবে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত না হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে স্লোভেনিয়া, মাল্টা এবং বেলজিয়াম ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তবে দেশটির নির্বাচনের আগে আগে বেলজিয়াম দৃশ্যত সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে।
এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গত ১০ই মে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক ভোটাভুটিতে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি দেশ ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্য পদ প্রাপ্তির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদায় রয়েছে। এর ফলে তাদের জাতিসংঘে আসন থাকলেও ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারে না।
আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের মতো অন্য অনেক সংস্থার সদস্য হিসাবে রয়েছে ফিলিস্তিন।
ইউরোপের অল্প কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এদের মধ্যে আছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভুক্ত হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশ। এর বাইরে সুইডেন ও সাইপ্রাসও স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বহু দেশ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তারা বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসাবেই তারা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
নিউজ সুত্রঃ বিবিসি বাংলা