ডেস্ক রিপোর্টঃ সারাদেশের ন্যায় আশুগঞ্জে মহান মে দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু মে দিবস কি তা জানেনা আশুগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। জানেনা আশুগঞ্জের
চাতাল শ্রমিকরা মে দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য। যখন রোদের প্রখরতা তখনও চাতাল শ্রমিকরা এই কাঠফাটা রোদের মধ্যে কাজ করছেন। সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। সারা শরীর জবজবে ভেজা। জীর্ণ-শীর্ণ শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় কেমন খাটুনি খাটতে হয় এই মানুষগুলোকে।
অথচ তারা জানেন না মে দিবস কী, মে দিবসের ছুটির কথা শুনে তারা শুধু হাসছেন, সমাজের অনেকে হাসতে না জানলেও খেটে খাওয়া এ শ্রমিকরা প্রাণ খুলে হাসতে জানেন! কাজেও এ হাসি-খুশিটাই তাদের জীবনকে সচল রেখেছে।
তারা এই চাতাল শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক,নৌযান শ্রমিক, ডি,এস,আর শ্রমিক কিংবা দোকানদার শ্রমিক। দিনভর শ্রম দেন তারা রুটি তৈরীতে,জাহাজের মাল খালাস করতে বা খাদ্যদ্রব্য দোকানীদের কাছে পৌঁছে দিতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বিভিন্ন চাতাল কলে, নৌযানে,হোটেল -রেস্তোরাঢর শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞের এমন চিত্রই দেখা যায় সবসময় বলে আশুগঞ্জে মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রকাশ দত্ত এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির মতে, জাতীয় অর্থনীতিতে চাতাল কল,নৌযান, ডি,এস,আর,একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এ শিল্পের নেপথ্য মানুষগুলো নানা বঞ্চনা আর অবহেলার শিকার হয়ে আসছেন। এসব শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরির্বতন হয়নী। মধ্যযুগের ভূমিদাসের মতোই এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে বাঁধা তাদের নিয়তি। তারপরও পেটের জ্বালায় বারবার ফিরে আসেন এসব কর্মে। যাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকানো তাদের আবার দিবস কী?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নৌযান কার্গো বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ আশুগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তানশেন আহমেদ বলেন,”কতো দিবস আসে যায় কিন্তু আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে আছি” ।
চাতাল মেইলের শ্রমিক রানা তার বক্তব্যে বলেন, অভাব অনটনের নিজের জাইত পর্যন্ত ভুইলে গেছি হামরা। আর দিবসতো অনেক দুরের বিষয় লাগেক। সব দিনইতো হামদের লাগি সমান।
৪৭ বছর বয়সী চাতাল শ্রমিক হোসেন বলেন, তিনি নিত্যদিন হারখাটুনি পরিশ্রমের কথা। ১৪ বছর বয়স থেকে কাজ করছেন চাতাল মিলে । তিনি জানান, “এক সময় হামি পতেক দিন হাজরি পাইথম ২০ -৪০টেকা। এখন হামি হাজরি পাই ৩০০থেকে ৪০০ টেকা। এই পয়সাই কেমনে চলবেক পেট। বড় কষ্ট কইরে দিন পাইর কইরে দেই। কাকে দোষ দিব। এইটা হামার কপাল লাগে।”
তিনি জানালেন, তিনিও স্বপ্ন দেখেন “একদিন তার বাড়ি সুন্দর হবেক”। তার ভাষায়, “আবার এইটা ভাবছি এই হাজরি দিয়ে (মজুরি) কী সম্ভব? যেখানে জামাই-লেইকা-বাচ্ছা লিয়ে দুই বেলা খাইতে নাই পারি। লাখ টেকার ঘর কেমনে বানাবো মাটিটাই হামদের নাই লাগে!”
তিনি বলেন, মে দিবসে রাস্তায় মিছিল বের হয়। এর বেশি কিছু জানি না।
শুধু রানা বা হোসেন নয়,একই অবস্থা জসিম,
কামাল,বিশাখা রানী,সীতা কৈরীসহ আরও অনেক হোটেল ও চাতাল শ্রমিকের। তারা জানান, বছরের এই সময়টি চাতাল মিল গুলোতে পুরোদমে কাজের ব্যস্ততা থাকে।
তারা আরও জানান, ছুটির আগের দিন কেউ যদি কাজে না যায় তাহলে সে ছুটিবারের কোন মজুরি পাবে না। কাজ করা এসব শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্যসম্মত আবাসস্থল নেই।
“আমরা চাই জীবনের নিরাপত্তা,চাকুরীর নিশ্চয়তা ও শ্রমিকদের অধীকার প্রতিষ্ঠা” এ স্লোগানকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নানা আয়োজনে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় শ্রম কল্যান কেন্দ্র মাঠ প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ও আশুগঞ্জ ডি, এস, আর শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এর যৌথ আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে আশুগঞ্জ বন্দর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় আশুগঞ্জ শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র মাঠে এসে যোগদানপূর্বক এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ আশুগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা কার্য্যালয়ের সভাপতি ইদন মিয়া মিন্টুর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের কোষাধক্ষ হাবিবুল্লা বাহার মাস্টার,ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ আশুগঞ্জ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হাকিম,যুগ্ম সম্পাদক মিজান মিয়া,পরিবেশক সমিতির সভাপতি জুয়েল মিযা,রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুবুর মুন্সী,সাধারণ সম্পাদক অলেছ সরকার,মাঝি সমিতির সভাপতি কদর আলী,ডি, এস, আর,শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন, রুবেল মুন্সী প্রমূখ।
এখানে উল্লেখ্য যে, দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালে শ্রমিকরা আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সমবেত হয়েছিলেন। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ফলে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।