নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা বিনতে ইউসুফের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী ও দায়ীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ।
রবিবার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে আনিকা বিনতে ইউসুফের ছোট বোন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা অবনিসহ নোবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বামীর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যে মেধাবী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করলো তার মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নয়, আমাদের চারপাশে নারীর প্রতি ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, যার অপার সুযোগ-সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিলো, তার আগেই কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো তা গভীরভাবে বিবেচনা করা জরুরি।
বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত আনিকা বিনতে ইউসুফের ছোটবোন সিদরাতুল মুনতাহা অবনি বলেন, আনিকা আপুর স্বামী ফারহিন হামিদ ওহি মাদকাসক্ত। তিনি অনেক মেয়ের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত।বিয়ের পর থেকেই স্বামী কর্তৃক গালিগালাজ, লাথি, কিল, ঘুষি, থাপ্পর, জুতারবাড়িসহ বিভিন্ন রকমের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আনিকা আপু।
বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সঙ্কট দেখিয়ে গ্রিন কার্ড, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য আনিকা আপুকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় সে। স্বামীর অত্যাচারে নিজের ক্যারিয়ারেও পেছাতে হয় আনিকা আপুকে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার দুই বছরেও মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেন নি এবং কোন চাকরির পরীক্ষার প্রিপারেশনও নিতে পারেননি ওনি।
একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী হওয়ার পরেও আমার আপুর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফারদিন সবসময় আমার বোনকে মৃত্যুর জন্য প্ররোচিত করতো। সবসময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে আমার আপুকে। তার (ফারদিন হামিদ ওহি) এই রকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার আপু আত্মহত্যা করেছে।
আমার বোনের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকরী ফারহিন হামিদ ওহীকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার ও দেশে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দেশে অবস্থানকারী অন্যান্য সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি জানাই। একই সাথে ফারহিন হামিদ ওহী যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত কোনো দেশে স্থায়ী নাগরিকত্ব না পায় তারজন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই কমিশনে নোবিপ্রবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল নোবিপ্রবি ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা বিনতে ইউসুফ আত্মহত্যা করেন। প্রবাসী স্বামীর পরকীয়া, নির্যাতন ও শ্বশুরবাড়ির অসহযোগিতা সইতে না পেরেই আনিকা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে এমন অভিযোগ করেন আনিকার পরিবার। ঘটনার ৪দিন পর গত ৩০ এপ্রিল এই ঘটনায় স্বামী ফারদিন আহমেদ ওহি (৩১), শ্বশুর আকতার হামিদ(৬৭) ও শ্বাশুড়ি নূর জাহান বেগমকে (৫০) আসামী করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ১নং আমলি আদালতে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন নিহত আনিকার বাবা মো.ছায়েফ উল্ল্যাহ্।