প্রচণ্ড ঝাল-টক-মিষ্টি মশলা পানিতে ভেজানো এই কুড়মুড়ে খাদ্যটি খেয়ে যতই চোখ-নাক দিয়ে পানি পড়ুক, জিভের পানি আটকানো যায় না। ফুচকা কিন্তু ঘরেও বানানো যায়। তবে ভোজনরসিকদের কাছে রাস্তার ফুচকাই প্রিয়, তা সে যতই অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশে বানানো হোক না কেন। ‘একবাটি খেলে কী আর এমন হবে!’ — ফুচকাপ্রেমীদের এই এক অকাট্য যুক্তি।
দ্রৌপদী প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি এলে রান্নার ভার পড়ল তার ওপর। পাণ্ডবেরা তখনো বনবাসে, তাই কুটিরে রান্নার উপকরণ একেবারেই সীমিত। পাণ্ডবমাতা কুন্তিও বোধহয় ভাবলেন – সামান্য উপকরণ দিয়ে পুত্রবধূ সংসারকে কতটা পটুহাতে সামলাতে পারে এই সুযোগে তা যাচাই করে নেওয়া যাবে!
পরিকল্পনা মোতাবেক করা হলোও তা-ই। আগের দিনের বেঁচে যাওয়া সামান্য কিছু আলুসবজি ও ময়দার ময়ান দেওয়া হলো দ্রৌপদীকে। দিয়ে কুন্তী বললেন, সবাই যেন পেট ভরে খেতে পায়! রন্ধনে দ্রৌপদীর হাতও ছিল বেশ পাকা। কেউ ভালো রান্না করতে পারলে প্রচলিত কথায় তাকে আমরা ‘রন্ধনে দ্রৌপদী’ও বলি অনেক সময়। রন্ধনপটীয়সী দ্রৌপদীর তাই বেগ পেতে হলো না। বুদ্ধি করে ময়দার ময়ানকে সমানভাগে ভাগ করলেন। তার ভেতর পুরে দিলেন সেই বাসি আলুসবজি। এরপর চুলোর ওপর বসানো হলো কড়াই। ঢালা হলো কড়াইভর্তি তেল। গোল গোল করে রাখা ছোট্ট ময়দার খামিগুলোকে দ্রৌপদী ছেড়ে দিলেন উত্তপ্ত ডুবো তেলে। খামিগুলো ফুলে উঠতে শুরু করলে চুলো থেকে নামিয়ে নিলেন সেগুলো। তারপর সবাইকে সমানভাগে পরিবেশন করলেন। আলুসবজির পুর দিয়ে ডুবোতেলে ভাজা মচমচে এই ঝাল খাবারটি কুন্তী এবং পাঁচ ভাইয়েরই দারুণ পছন্দ হয়। সেবার না-কি পুত্রবধূর রান্নায় খুশি হয়ে কুন্তী বর দেন এই খাবার অমরত্ব লাভ করবে। সত্যি তা-ই হলো। নতুন স্বাদের এই খাবারটিই আজকের ফুচকার আদিরূপ!
ফুচকার ইতিহাস বহু পুরোনো
ফুচকার উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে মহাভারতের এই কাহিনী লোকমুখে বেশ প্রচলিত। এছাড়া প্রাচীন গ্রীসের পর্যটক মেগাস্থিনিসের লেখা ‘ইন্ডিকা’ বইয়ের পাতায়ও না-কি হদিস মেলে এই ফুচকার। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার ৩৩৩ বছর আগে ৩১০ খ্রিষ্টপূর্বে লেখা হয়েছিল এ বই। সময়ের হিসেবে যা মহাভারতেরই সমসাময়িক। তবে বইটি এখন বিলুপ্ত।
আবার কোথাও কোথাও লেখা আছে ফুচকার উৎপত্তি প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে। ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বর্তমানে যেটি এখন পশ্চিম-মধ্য বিহার, তা এককালে গঙ্গানদীর তীরে মগধ সাম্রাজ্য ছিল। বলা হয়, ফুলকি তথা ফুচকা সেখানেই আবিষ্কার করা হয়। আবার এই মগধ রাজ্যেই জন্ম নিয়েছিলেন দ্রৌপদী। তখন পাঞ্চাল আর মগধ ছিল একসাথেই। পরে ভাগ হয়ে যায়। সে হিসেবে ফুচকার উৎপত্তিস্থল মগধ বললেও ভুল হবেনা।
চাটমশলা যখন দূষিত পানির জীবানূনাশক
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্যাল জার্নাল অভ ইন্ডিয়ার ১৯৫৫ সালের সংখ্যার ১১৬ নাম্বার পৃষ্ঠায় ফুচকা নিয়ে বিশদ বিবরণ রয়েছে। সেখানে এ খাবারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে বলা হয়েছে বারাণসীর কথা। ওই লেখায় ফুচকাকে কিছুটা লুচির ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়; যা লুচির চেয়ে অনেকটাই শক্ত এবং কুড়মুড়ে। পরবর্তীকালে মোগলাই খানার সংস্পর্শে এসে এর গাঠনিক আঙ্গিকে পরিবর্তন আনে ভারতীয়রা। শক্ত কুড়মুড়ে লুচির সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন মসলাপাতি আর সঙ্গে টক-মিষ্টি পানীয়। এই মশলাপাতি নিয়েও পাওয়া যায় প্রাচীন এক ইতিহাস।
‘ডাইজেস্টিং ইন্ডিয়া: আ ট্র্যাভেল রাইটারস সাবকন্টিনেন্টাল অ্যাডভেঞ্চারস উইথ দ্য টামি’ বইয়ে ঔপন্যাসিক জ্যাক ও’ইয়ে জানিয়েছেন, মধ্যযুগে যমুনার পানিকে বিভিন্ন রোগের কারণ এবং বাহক বলে মনে করা হতো। এর থেকে মুক্তি পেতে দিল্লির রাজপরিবারের চিকিৎসক তখন একধরনের মশলা সমৃদ্ধ ডায়েটের ধারণা দেন, যা ঐ দূষিত পানির জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করবে। এই ডায়েট মশলাকেই আমরা আজ চাট মশলা হিসেবে চিনি!
ইনস্ক্রিপ্ট ডটমি-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফুচকার দুটি অপরিহার্য উপাদান আলু এবং মরিচ ৩০০–৪০০ বছর আগে ভারতে এসেছিল ইউরোপীয়ানদের হাত ধরে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ পুষ্পেশ পান্থের মতে, আজ থেকে মোটামুটি ১২৫ বছর আগে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের আশেপাশে তৈরি হয়েছিল গোলগাপ্পা। তার মতে, এমনটাও সম্ভব যে রাজ-কচৌরি থেকে গোলগাপ্পা তৈরি হয়েছিল।
আছে বিভিন্ন নাম!
প্রথম দিকে ফুলকি নামে পরিচিত ছিল ফুচকা। তবে প্রাচীন সে ফুলকি দেখতে অনেকটাই ছোটো এবং কুড়মুড়ে ছিল এখনকার চেয়ে। মহাভারতে ফুচকাকে ‘জলপত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার বর্তমানে অঞ্চলভেদে নামকরণের ভিন্নতার পাশাপাশি এর পরিবেশনের পদ্ধতিতেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন পাকিস্তান, এবং ভারতের নয়াদিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশে এর নাম গোলগাপ্পা। দেখতে লম্বাটে ধরনের এ খাবারে দেওয়া হয় আলু, মটর, টক-মিষ্টি চাটনি। এই টক-মিষ্টির পানিতে থাকে মশলা আর পুদিনা পাতার সমাহার। গুজরাটে বলা হয় পাকোড়ি, যা স্বাদে এবং পরিবেশনে ফুচকার মতোই। শুধু বৈচিত্র্য আনতে দেওয়া হয় ঝুরিভাজা আর পুদিনা, কাঁচা মরিচ, তেঁতুলের টক-ঝাল পানি।
আবার পানিপুরি বলা হয় ফুলন্ত মচমচে পুরির ভেতর টক-ঝাল-মিষ্টি পানি দিয়ে খাবার কারণে। ফুচকার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত নাম হলো পানিপুরি। মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন স্থানে পানিপুরিতে তেঁতুলের মিষ্টি চাটনিতে ডোবানো থাকে ঝাল মটরের তৈরি রাগড়া। তবে মধ্যপ্রদেশের কিছু স্থানে তৈরি পানিপুরিতে থাকে আলু সেদ্ধ ঝাল করে মাখা এবং মিষ্টি চাটনি।
নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় এ খাবার জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ফুলকি নামে। উত্তরপ্রদেশের অনেক অঞ্চলেই ফুচকাকে ফুলকি ডাকা হয়। রোজার দিনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিশেষভাবে তৈরি হয় দই ফুলকি। দই বড়া আর মটর দিয়ে বানানো হয় দই ফুলকি।
মধ্যপ্রদেশ, মুম্বাই, পুনের আকর্ষণীয় এক পদ সেভপুরি। সেভ বা ভুজিয়াকে আমরা বাংলাদেশে চিকন চানাচুর ভাজা হিসেবে চিনি। এই সেভ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ পরিচিত নাস্তা। অনেক স্থানেই সেভ দিয়ে তৈরি হয় ফুচকা। মুম্বাইয়ের উৎপত্তি হলেও আজ অনেক জায়গায়ই এটি জনপ্রিয়। সঙ্গে থাকে রসুনকুচি।
মরুভূমি অঞ্চল রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশে পাতাসি নামে পরিচিত খাবারটি অনেকটা গোল্গাপ্পার মতোই। তবে তেঁতুলপানির পরিবর্তে শুকনো আমের চাটনি ব্যবহার করা হয় এখানে। পানিকে পাতাসি, পানিকে বাতাশে দু-ই নামই আছে খাবারটির।
এছাড়া তেলেঙ্গানা, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, হায়দরাবাদের অনেক অঞ্চলে একে ডাকা হয় গুপচুপ নামে। এখানে আলু ব্যবহার করা হয়না, তার পরিবর্তে ছোলা বা মটর সেদ্ধ, আর থাকে তেঁতুলের টক-ঝাল-মিষ্টি ঝোল। অনুরোধে মেলে পেঁয়াজকুচি।
সাতচল্লিশের আগে ফুচকার এত কদর ছিল না বাংলাদেশে
দেশভাগের পর মূলত ঢাকায় এটির আগমন। ঢাকায় এসে ফুচকার অনেক বিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন লেখালেখি থেকে জানা যায়, এর আগে এমনকি যারা ফুচকা খেতেন, তাদেরকে দেখা হতো বৈষম্যের চোখে; উপহাস করে ‘ঘটি’ কিংবা ‘কেইশো’ বলে উপাধি দেওয়া হতো। ভারত বিভক্ত হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাসিন্দা বাংলাদেশে চলে আসেন। তারাই ফুচকাকে জনপ্রিয় করে তোলেন এদেশে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় একটি গোটা গ্রামের নামই রয়েছে ‘ফুচকা গ্রাম’ নামে (বঙ্গদর্শন, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩)।
আমাদের দেশে ফুচকা এবং চটপটি পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি নাম। বিক্রেতারাও ফুচকা এবং চটপটি দুটোই একসঙ্গে নিয়ে বসেন। কিন্তু গত প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের দেশেও ফুচকার ধরনে এসেছে বৈচিত্র্য। ফুচকা তো ছিলই, সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে পানিপুরি, ভেলপুরি। এরা সবাই ফুচকা গোত্রেরই। উপকরণগুলো কাছাকাছি হলেও পরিবেশন এবং স্বাদে তিনটে আইটেমই আলাদা। যেমন আকারের দিক থেকে সবচেয়ে ছোটো পুর দেওয়া হয় পানিপুরিতে। গোল গোল পুরিগুলোতে অল্প পরিমাণ ডাল, আলু, মটর দিয়ে টক-ঝাল পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই পানিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজকুচি। আবার ভেলপুরির পুরিগুলো হয় বড় বড়। পুরির ভেতরটা আলু ঘুগনি দিয়ে ভরে দেওয়া হয়। ওপরে ছিটিয়ে দেওয়া হয় টমেট, শসার সালাদ। কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা, কি শীত — ফুচকা, ভেলপুরি, পানিপুরির নেই কোনো বিরতি।
শিক্ষার্থীদের পছন্দ পানিপুরি-ভেলপুরি
তবে শীতের দিনে গরম গরম চটপটি আর গরমের দিনে বেড়ে যায় দই ফুচকার কদর। ভারতের উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাদেশেও দই ফুচকার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাধারণ ফুচকার ওপরেই ঠান্ডা-ঠান্ডা টক দই, বিটকুচি আর চানাচুর ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয় দই ফুচকা। এর সাথে থাকেনা কোনো আলাদা টক-ঝাল-মিষ্টি চাটনি। গরমের দিনে ফুচকার ওপরে ঠান্ডা দই ঢেলে দিয়ে এক একটা মুখে পুরে দিতেই যেন ঠান্ডা পরশ ছুঁয়ে যায় শরীরে।
তবে ফুচকা, চটপটি বা দই ফুচকার দিন যেন একটু মিইয়ে গেছে ভেলপুরি-পানিপুরির কাছে। ঢাকার রাস্তাজুড়ে এখন যতটা না চটপটি, ফুচকার দোকান দেখা যায়, তার চেয়ে বেশি চোখে পড়ে ভেলপুরি, পানিপুরি। ফুচকা বিক্রেতা এবং ভোক্তা উভয়ের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায়, কিশোর বা তরুণ উভয়ের কাছেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভেলপুরি এবং পানিপুরি। বড়দের সেখানে ফুচকা বা চটপটিতেই স্বাচ্ছন্দ্য। এক প্লেট ফুচকা সর্বনিম্নে ৫০ থেকে শুরু করে ইউনিমার্ট বা বিভিন্ন দোকানে ১০০–২০০ টাকা পর্যন্ত। ভেলপুরি বা পানিপুরির দাম শুরু হয় ১০–২০ টাকা থেকে, বিক্রি হয় পিস হিসেবে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভেলপুরি বা পানিপুরি পছন্দের পেছনে দামও একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করেন এসব ফেরিওয়ালারা।
প্রায় দেড় দশক ধরে ধানমন্ডি লেকে ফুচকা নিয়ে বসেন শফিক। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে যখন শুরু করেন, তখন ফুচকা দিয়েই যাত্রা করেছিলেন। এরপর মাঝে ভেলপুরি, এখন পানিপুরি-ভেলপুরি দুটোই রেখেছেন। একেকজনের একেক আইটেম পছন্দ। তবে শীতের দিনে ভেলপুরি এবং গরমের দিনে পানিপুরি খাবার চাহিদা বেশি।
নিউমার্কেটের আরেক ভেলপুরি-পানিপুরি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বাদাম বেচতেন, এখন ভেলপুরি, পানিপুরি দুটোর চাহিদাই সমান। অবশ্য বাচ্চারা পছন্দ করে পানিপুরি।
তবে ফুচকা-চটপটিও কম যায় না। নাজিমুদ্দীন রোডের হাসিনা মঞ্জিলের (যা আগে ছিল মুসলিম লীগের কার্যালয়) পাশেই বসেন জামাল মিয়া। তার দোকানে ভেলপুরি বা পানপুরি নেই। তিনি জানান, চটপটিই খেতে চায় বেশি মানুষ। এছাড়া ভেলপুরি, পানিপুরি যেখানে ফুটপাতে-রাস্তার ধারেই পাওয়া যায়, চটপটি ফুচকা সেখানে দোকানেও ঠাঁই পায়।
‘আ কম্পলিট বেঙ্গলি স্ট্রিটফুড’
দেশ বিদেশের নানা ব্লগ, ট্রাভেলিং এবং ফুড ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানগুলোতে ফুচকার কথা উঠে এসেছে বারবার। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাস্টারশেফ কিশোয়ার চৌধুরী। পুরো প্রতিযোগিতা জুড়ে দেশীয় খাবারকেই উপস্থাপন করে গেছেন নিজস্ব ধাঁচে। তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি করেছিলেন ফুচকাও। এই খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন বিচারকদের কাছে।
২০২২ সালের ২৪ আগস্ট সিএনএন-এর ট্রাভেল বিভাগে কেট স্প্রিঙ্গার লিখেছেন: ‘একটু মিষ্টি, একটু টক, একটু ঝাল ফুচকা বাংলােদেশর পথেঘাটে সবেচেয় বেশি বিক্রি হওয়া খাবার। ভারতে যেটি পানিপুরি, গোলগাপ্পা বা গুপচুপ নামে পরিচিত, ফুচকা সেটিরই বাংলাদেশি সংস্করণ। এটা দেখতে যেমন মুচমুেচ, খেতেও তেমন।
‘এছাড়া পরিবেশনের আগে এর ওপর ছিটিয়ে দেওয়া হয় সিদ্ধ ডিমের ঝুরি এবং সঙ্গে থাকে এক ধরনের তেঁতুলপানি। খেতে কিছুটা টক-ঝাল-মিষ্টিজাতীয় এ টক জিভে জল নিয়ে আসতে বাধ্য, তা আপনি যেরকম রুচিরই হয়ে থাকুন না কেন।’
ফুড অ্যান্ড ট্রাভেলিং চ্যানেল ‘টিএলসি’ এবং ‘ফক্স ট্রাভেলার’-এ বহুল প্রচলিত অনুষ্ঠান ফুড সাফারিতে ফুচকাকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘আ কম্পলিট বেঙ্গলি স্ট্রিটফুড’ হিসেবে।
ফুচকার পিপাসা মিটবেনা!
বাংলাদেশের স্ট্রিটফুডের কথা এলেই সবার আগে আসবে ফুচকার নাম। যে কারণে বিদেশিরা কেউ এদেশে এলে ফুচকা না খেয়ে যান না! কলাবাগানে লেক সার্কাসে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ফুচকা বিক্রি করছেন চাঁন মিয়া। সে-ই থেকে এখনো চটপটি আর ফুচকাই বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে চাঁন মিয়া একটি পরিচিত নাম। তিনি জানান, ‘সবাই বেশি পছন্দ করে ফুচকাই। এলাকার ছোটবড় সবাই-ই আসে। এমনকি আমার একজন কানাডাপ্রবাসী কাস্টমার আছেন। তিনি দেশে এলেই আমার দোকানে এসে ফুচকা খেয়ে যান।’
আর বাংলাদেশি মানুষের কাছে ফুচকা মানেই ‘প্রেম’। বাঙালির সঙ্গে ফুচকার যে সম্পর্ক আবহমানকাল ধরে চলে এসেছে, তা থাকবে চলমান। প্রচণ্ড ঝাল-টক-মিষ্টি মশলা পানিতে ভেজানো এই কুড়মুড়ে খাদ্যটি খেয়ে যতই চোখ-নাক দিয়ে পানি পড়ুক, জিভের পানি আটকানো যায় না। ফুচকা কিন্তু ঘরেও বানানো যায়। তবে ভোজনরসিকদের কাছে রাস্তার ফুচকাই প্রিয়, তা সে যতই অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশে বানানো হোক না কেন। ‘একবাটি খেলে কী আর এমন হবে!’ — ফুচকাপ্রেমীদের এই এক অকাট্য যুক্তি। তবে যারা স্বাস্থ্যসচেতন এবং ফুচকাপ্রেমী, তাদের জন্য বিভিন্ন দোকানে বা রেস্তোরাঁয় আছে ফুচকার খাওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু রাস্তার ধারের মামার হাতের তৈরি ফুচকার যে নেই কোনো তুলনা!