তাজমহল নিয়ে প্রচলিত একটা কথা আমরা শুনেছি এবং কথায় কথায় উদাহরণ হিসেবে একটা কথা ব্যবহার করি ৷ কথাটা হলো ‘তাজমহল নির্মাণ সমাপ্ত হবার পর সম্রাট শাহজাহানের আদেশে তাঁর সৈন্যরা শ্রমিকদের আঙুল কেটে দিয়েছিল যেন তারা এমন সুন্দর নিদর্শন দ্বিতীয়বার নির্মাণ করতে না পারে ৷’ বাংলাদেশে বিশেষভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলার ব্যাপারে শোনা যায় ৷ কিন্তু এই দাবি বাস্তব ঘটনার পরিপন্থী এবং ভুল ধারণা ৷
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৬৩১ সালে সম্রাট শাহজাহানের সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী আরজুমান বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে সমধিক পরিচিত, তাদের চতুর্দশ সন্তান গওহর বানুকে জন্ম দেবার পর প্রসব জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন ৷ সম্রাট শোকাহত হয়ে পড়েন এবং নিজেকে ঘরবন্দী করেন ৷ তারপর ১৬৩২ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে স্থপতি, নকশাকার আনিয়ে পারস্য, ইসলামিক ও ভারতীয় (বিশেষ করে রাজপুত) স্থাপত্যকলার মেল বন্ধন ঘটিয়ে নির্মাণ করেন তাজমহল নামক সমাধিসৌধ ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের জাঁকজমক সমাধিসৌধ নির্মাণের প্রচলন সম্রাট বাবরের সময় থেকেই বহাল ছিল ৷
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি ৷ সম্রাট শাহজাহান কোনো শ্রমিকের হাতের আঙুল কাটেননি ৷ তিনি শ্রমিকদের কাজের সুবিধার জন্য তাজমহলের সামনে তাদের স্থায়ী আবাস গড়ে দেন ৷ এই আবাসকে তাজগঞ্জ বলে ৷ তাজগঞ্জে সেই শ্রমিকদের বংশধররা আজও বাস করে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে মার্বেল পাথর কেটে তাদের রত্নপাথর বসানোর কাজ করে আসছে ৷ এছাড়া একই শ্রমিক ১৬৪৮ সালে পুরাতন দিল্লির শাহজাহানাবাদ শহর নির্মাণ করেন যখন শাহজাহান তাঁর রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করেন ৷ একই শ্রমিক ১৬৫০ – ১৬৫৬ সালের মধ্যে দিল্লির বিখ্যাত জামে মসজিদও নির্মাণ করেন ৷ আঙুল কেটে দিলে এগুলো সম্ভব হতো না ৷
শাহজাহান স্থাপত্যকে ভালোবাসতেন তাই নিঁখুত কাজ করে পারে এমন শ্রমিক খোঁজা এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভরণপোষণ করতেন এবং তাদের বিভিন্ন শহরে নিয়ে গিয়ে নির্মাণ কাজ করাতেন ৷